নিশুতি রাতের নিস্তব্ধতা কে ভেঙে পারুলের আত্বচিৎকারে জেগে উঠলো ঘুমে বিভোর বাড়ির মানুষগুলি ।সবাই দৌড়ে ছুটে এলো পারুলের ঘরের সামনে। এ কি দেখছে তারা? ঘুমে জড়ানো চোখদুটো দুইহাতে ডলে পরিষ্কার করার পরেও সেই একই দৃশ্য !রক্তাক্ত নিথর দেহে বিছানার উপর পড়ে আছে পারুলের স্বামী এস,আই ফারুক । সারা গায়ে রক্তমাখা অবস্থায় শিয়রে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে শুর করে কেঁদে যাচ্ছে পারুল ।পারুলের ভাষ্যমতে ,কেউ একজন ফারুকের নাম ধরে দরজায় নক করতে থাকে। পরিচিত মানুষ ভেবে ফারুক দরজা খোলার সাথে সাথে আততায়ী অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়ে ফারুকের উপর । পারুল কিছু বুঝে উঠার আগেই পালিয়ে যায় অস্ত্রধারী ।তৎহ্মনাত পারুলের কথা বিশ্বাস করলেও কিছুহ্মন পর সন্দেহের দানা বাধতে শুরু করে সবার মনে।
অত্যন্ত সৎ,নিষ্ঠাবান এই পুলিশ অফিসার তার কর্মহ্মেত্রে যেমন প্রিয় , তেমনি ভাবে পরিবার,আত্বিয়স্বজন, প্রতিবেশী গ্রামের লোকজন সবার কাছে অতি প্রিয় মানুষ হিসাবে পরিচিত । একসপ্তাহের ছুটিতে গ্রামে এসেছে ফারুক ।
তবে কোন আনন্দের ছুটি কাটাতে না।
স্ত্রী এবং দুই মেয়ে রিতা,রানুকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে ।
বদলি চাকরির কারনে মেয়েদের পড়াশোনায় হ্মতি হওয়ায় বছর দুই আগে ফারুক তার পরিবারকে গ্রামে রেখে গেছে।
গ্রামের স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েদের কে ।
স্ত্রী পারুল অসাধারণ সুন্দরি এবং আধুনিক মানুসিকতার মহিলা। প্রথম প্রথম ফারুকের সাথে খুব ঝামেলা করলেও এখন সে গ্রামের পরিবেশকে বেশ. মানিয়ে নিয়েছে।
ফারুকের জীবনের সবচেয়ে বড় ভূলটা হয়েছে পারুলকে বিশ্বাস করে গ্রামে রেখে যাওয়া।
মোবারক ফারুকের ছোট ভাই, বি,এ পাশ করা বেকার যুবক।
কাজ কাম না থাকায় পারুলের বাজার সদাই করা,রিতা রানুকে পড়াশোনায় সাহাজ্য করা সহ পারুলের সংসারের যাবতীয় কাজগুলি মোবারক দায়িত্বের সাথে পালন করে যাচ্ছে।
ভাইএর অনুপস্থিতি তে ভাবির রূপ লাবন্য আর ছলাকলার কাছে এক সময় আটকে যায় মোবারক ।
শুরু হয় দুই পাপীর পাপাচারীতা ।
পারুল মোবারকের এই পরোকীয়া প্রেমের কাহিনি এক সময় গ্রামের মানুষের কাছে মুখরোচক গল্পে পরিনত হয়। এক সময় এই কাহিনি ফারুকের কানে পৌছে যায়। কয়েক দফায় বাড়ি এসে ফারুক ভাইকে শাসন আর বউকে হুসিয়ার করলেও শেষ পর্যন্ত পথে আনতে পারেনি কাওকেই।
অবশেষ বাবা, মা, শ্বশুর,শাশুড়ির সাথে আলোচনা করে ফারুক সিধান্ত নেয় পারুলকে তার নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার। সেই হিসাবে ফারুক তার অফিসের কাছেই একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নেয়। পারুলকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেয় অমুক তারিখে এসে তোমাদেরকে নিয়ে যাব ।
আকস্মিক এই সিধান্তে পারুলের মাথায় বাজ পড়ে। দিশেহারা হয়ে যায় পারুল । অবশেষে মোবারকের সাথে গোপন বৈঠকের আলোচনায় সিধান্ত নেওয়া হয় চিরতরে দুর করা হবে পথেরকাঁটা । ষড়যন্ত্রের, জালবুনে, রঙিন চশমায় চোখ ঢেকে স্বপ্নের রাজ্যে উড়তে থাকে দুই বিশ্বাস ঘাতক ।
ফারুক বাড়িতে এলে, ছলনাময়ী পারুল তার ভালবাসা দিয়ে ভুলিয়ে ফেলে স্বামীকে ।
গোপন বৈঠকের সিধান্ত অনুযায়ী গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগের দিন রাতে কাজ শেষ করার প্লান করে তারা ।
সেই হিসাবে রাত 12 টার পরে, ধরনি যখন ঘুমে বিভোর, চুপি চুপি ধারালো চকচকে গাছি দা হাতে মোবারক প্রবেশ করে পারুলের ঘরে।
ঘুমান্ত ফারুকের ঘাড় বরাবর কোপ দিলেও সেটা লাগে ডান হাতের কনুইএর উপর । অচমকা আঘাতে জেগে উঠে ফারুক । চোখের সামনে দেখতে পায় দুই বিভিষীকাকে । বউ আর ভাইএর কাছে দুই হাত জোড় করে প্রাণ ভিহ্মা চায় অসহায় এই মানুষটা ।
ভাইএর রক্ত আর নিজের রক্ত মোবারকের চোখে এক হয়ে যায় ।কাপতে থাকে থর থর করে ,হাত উঠেনা কিছুতেই প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের উপর। এই সময় পারুল মোবারকের হাত থেকে কেড়ে নেয় গাছি দা টা, তারপর কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই এক কোপে ফারুকের দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেলে ।
ঠান্ডা মাথায় রক্তমাখা গায়ে গাছি দা টা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মোবারক । পাশের পুকুরে মরণ অস্ত্রখানা ছুড়ে ফেলে, ঝাপিয়ে পড়ে পুকুরে, ডলে ঘোষে ধুয়ে ফেলে ভাইয়ের সেই কাতর কান্নার চিহ্ন গুলো।
ঘন্টা দুই এক পরেই শুরু হয় পারুলের নাটক । প্রথমে সবাই বিশ্বাস করলেও, কিছুহ্মন পরে সবার সন্দেহ পড়ে পারুল আর মোবারকের উপর ।
সকালবেলা পুলিশের জেরার মুখে পারুল, মোবারক স্বিকার করে তাদের অপরাধের কাহিনি ।
অসহায় দুই শিশু অশ্রুসজল করুন চোখে চেয়ে দেখে মা হাতকড়া পরে উঠে যাচ্ছে পুলিশের গাড়িতে আর বাবার জন্য তৈরী হচ্ছে বাশতলায় সাড়ে তিন হাত মাপের ছোট্ট একটা ঘর ।
এই মামলার রায় নিম্ন আদালত দুজনকেই ফাসির রায় দিলেও আপিলের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত মোবারকের দোষ লঘু থাকায় তাকে যাবতজীবন কারাদণ্ড এবং পারুলের অসহায় এতিম মেয়েদের কথা চিন্তা করে পারুলকেউ যাবতজীবন কারাদণ্ড প্রদান করে ।
বছর খানেকের মধ্যে পারুল, মোবারক তাদের সাজা শেষ করে বের হবে ।
পারুলের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তারা তাদের স্বামীর ঘরে সুখেই আছে ।
একটা প্রশ্ন আমার মনে বারবারই বিদ্ধ করছে ।পারুল যখন জেল থেকে বের হয়ে তার সন্তানদের সামনে দাড়াবে, তখন তারা কি তাদের পিতার হত্যাকারনী কুলটা চরিত্রহীন মাকে হ্মমা করে, মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদবে , না কি ঘৃণা করে অস্বিকার করবে তাদের গর্ভধারিণীকে ??????????